বাংলাদেশে তেলের দাম : তেলের দাম বৃদ্ধি কেনো?
ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি দেশী যেই নিউজটি ভাইরাল হয়েছে এবং হচ্ছে সেটি হলো বাংলাদেশে তেলের দাম সম্পর্কিত টপিক। চলুন আজ এই ব্যাপারে জানা যাক।
সয়াবিন তেলের দাম বাংলাদেশ কত এখন?
নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী আগামী ১ মার্চ থেকে খুচরা বাজারে গ্রাহকদের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি লিটার কিনতে হবে ১৮০ টাকায়।
এক লিটার লুজ সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪৩ টাকা, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮৭০ টাকা।
এছাড়া পাম তেলের দাম লিটার প্রতি ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উৎপাদকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি মাসের শুরুতে তেলের দাম প্রতি টন ১,৪০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
অয়েল রিফাইনার্স ও ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত ২০ দিনে সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে প্রতি টনে ১৭০০-১৭২৫ ডলারে পৌঁছেছে। এ কারণে কোম্পানিগুলো দাবি করছে, দাম না বাড়ালে তাদের ব্যাপক লোকসান গুণতে হবে।
তেলের দাম বৃদ্ধি কেনো?
যদি চাহিদা বাড়ে, সরবরাহ স্থির থাকে—জিনিসের দাম বাড়বে। যদি চাহিদা বাড়ে, সরবরাহও বাড়ে, তাহলে দাম স্থির থাকবে। যদি সরবরাহ বাড়ে, চাহিদা কমে—দাম কমবে।
তেলের দাম বেড়েছে, এর পেছনে অবশ্যই কারণ আছে—হয় চাহিদা বৃদ্ধি, নয়তো সরবরাহ হ্রাস। চালের দামও বেশি। বাংলার মানুষ বড় বেশি চাল খায়। পৃথিবীর অন্য দেশে গড়ে খায় ২০০ গ্রাম, বাংলার মানুষ খায় ৪০০ গ্রাম।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেছেন, বিশ্বে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছে। তাদের সাহায্যে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তাদের সাহায্যে বিশ্বের ধনকুবেরদের এগিয়ে আসতে হবে।
টেসলার মালিক ইলন মাস্কের ২৮৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। তিনি যদি তাঁর সম্পদের ২ ভাগ দান করে দেন, পৃথিবীর চরম খাদ্যসংকট মিটে যাবে। আরও জানা যাচ্ছে, করোনার সময়ে আমেরিকার শতকোটি ডলারের মালিকদের সম্পদ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
আমেরিকানস ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস নামের প্রতিষ্ঠান এ হিসাব জানাচ্ছে। বাংলাদেশে ট্যাক্স ফেয়ারনেস নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। থাকার প্রশ্নই আসে না। থাকলে দেখা যেত বাংলাদেশেও করোনাকালে শতকোটিপতি এবং লুটেরা শতকোটিপতিরা আরও বড়লোক হয়েছেন।
তাঁরাও যদি দেশের ধনী-গরিব বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য, ক্ষুধা দূর করতে তাঁদের সম্পদের কিছু অংশ ব্যয় করতেন, অনেকটাই উন্নতি হতো পরিস্থিতির। কিন্তু আমরা তো দান চাই না, ব্যাংকের ঋণ ফেরত চাই, অবৈধ আয়ের পথ বন্ধ করতে বলি আর বৈধ আয়ের ওপরে আইনানুগ কর-শুল্ক আদায় করতে বলি।
বলতে পারি, বকা মিয়া বলে যাবে, শোনা মিয়া শুনে যাবে। চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। ঘুষখোরেরা ঘুষ খেয়ে যাবে, মাদক কারবারিরা মাদক বেচে যাবে, ক্যাসিনোওয়ালারা ক্যাসিনো চালিয়ে যাবে, ব্যাংক লুটেরারা ব্যাংক লুটে নেবে, ভূমিদস্যুরা জমি দখল করে যাবে, বনখেকোরা বন–জঙ্গল–নদী খেতেই থাকবে।
তবে দেশে তেলের দাম বেড়ে গেছে। এটাই হলো কথা। আরও আরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের মাথা গরম। করোনায় বড়লোকদের আয় বেড়েছে, গরিবের আয় কমেছে, মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হয়েছে, নিম্নবিত্ত হয়েছে গরিব, গরিব আরও গরিব।
জিনিসপাতির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আর গরিবের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। আবারও প্যাকেজ দিতে হবে গরিবকে। সরাসরি গরিবের হাতে। দেশটা কেবল শতকোটিপতির নয়, গরিবেরও। বা গরিবেরই।
ইতি কথা
জানা গেছে, উৎপাদনকারী দেশগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বে উৎপাদিত সয়াবিন তেলের মাত্র ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ বা ১ কোটি ২৬ লাখ টন তেল আসে আন্তর্জাতিক বাজারে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন তেল উৎপাদন করে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। যদিও বিশ্বে সয়াবিন তেল আমদানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। তবুও কেনো এই মূল্যবৃদ্ধি? জানতে চাই আমরাও!