ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যেসব খাবার

 ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যেসব খাবার

আপনি জানেন কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৮ সালে ক্যান্সারের কারণে প্রায় ৯.৬ মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছেন? বেদনাদায়ক এই রোগটি বিশ্বের দ্বিতীয় মৃত্যুর কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন হঠাৎ করে ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে শুধুমাত্র আমাদের জীবনধারা এবং খাদ্যাভাসের কারণে। চলুন জেনে নিই ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যেসব খাবার। 

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে যেসব খাবার, ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপায়, ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবু, ক্যান্সার প্রতিরোধক ফল, ক্যান্সার এর লক্ষণ.jpg

ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবু

আমরা সকলেই জানি লেবুতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। ১০০ গ্রাম কাগজি বা পাতিলেবু থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, ভিটামিন-সি ৬৩ মিলিগ্রাম, যা আপেলের ৩২ গুণ ও আঙুরের দ্বিগুণ, ক্যালসিয়াম ৯০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ১৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-০.১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৩ মিলিগ্রাম।


লেবুর খোসায়ও পুষ্টি রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে ১ গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবত দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং স্বস্তি ফিরে আনে। লেবু ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল। এ ভিটামিন দেহে সঞ্চিত অবস্থায় থাকে না, সেজন্য শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে প্রতিদিনই ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় লেবু অত্যন্ত কার্যকর।


লেবুতে থাকা প্রচুর ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন-সি দেহের ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে এবং রক্তের জমাট বাঁধার ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুতে পর্যাপ্ত ভিটামিন-সি অ্যান্টি অক্সিডেন্টস হিসেবে কাজ করে দেহে ক্যান্সারসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে। শিশুদের দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি আবশ্যক।


এ সময় ভিটামিন-সি’র অভাব হলে তা শিশুর ওপর প্রভাব পড়ে, ফলে শিশুর দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত হয় না।


ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো

শুধু পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি হিসাবেই নয়, টমেটো অনন্য ভেষজ গুণেরও আধার। অর্থাৎ টমেটো শুধু ফল আর সবজিই নয় ওষুধও বটে। টমেটো শরীরের প্রতিরোধক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, কিডনিকে সক্রিয় রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি ক্ষারীয় তরকারী বলে শরীরের ক্ষারের পরিমাণ বাড়ায়। আর এ ক্ষার শরীরে অম্ল উৎপাদনকারী উপাদান যেমন-ফসফেট, ইউরিয়া এবং এমোনিয়াকে প্রশমিত করে বলে শরীরে অম্লক্ষারের সমানুপাতিক হার বজায় থাকে এবং শরীর সুস্থ রাখে। 


এতে শ্বেতসার থাকে বলে যারা ওযন কমাতে চান তাদের জন্য টমেটো উপকারী। প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকার কারণে রাতকানা ও ভিটামিন ‘সি’ থাকার দরুন ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে। চোখের অপটিক নার্ভের সুস্থতার জন্যও টমেটো উপকারী। 


এটি মূত্রথলির অম্লতাকে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করে, মূত্রাশয়ের সংক্রমণ ও পাথর তৈরীতে বাঁধার সৃষ্টি করে। এটি বদ হজমসহ পাকস্থলীর যন্ত্রণা বা আলসারের লক্ষণ দূরীভূত করে ও যকৃত বা লিভারকে সুস্থ রাখে। তাই পেপটিক আলসার ও জন্ডিসের রোগীর জন্য এটি উপকারে আসে। এছাড়া টমেটো ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং এর রস মুখমন্ডলের ত্বককে সজীব রাখে।


লাইকোপেন সবচেয়ে বেশী পরিমাণে আছে টমেটোতে। কিন্তু শরীর এ লাইকোপেন সহজে গ্রহণ করতে পারে না। তবে এ লাইকোপেন শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে কেবল রান্না করা হ’লে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত টমেটো যেমন পেস্ট, সস ইত্যাদি থেকে দেহকোষ সহজে লাইকোপেন গ্রহণ করতে পারে।


 টমেটো জুস থেকে সহজে গ্রহণীয় লাইকোপেন পাওয়া যায় যদি গরম করে নেয়া হয়। বোতলে ভরা বা টিনজাত টমেটো জুস যেহেতু গরম করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেজন্যে এর থেকেও লাইকোপেন পাওয়া যায়।


ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রিন টি

গ্রিন টি মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, গ্রিন টি মুখের ক্ষত, যা পরবর্তী সময়ে ক্যান্সারে পরিণত হয়, তা থেকে মুখকে রক্ষা করতে পারে।

৪১ জন রোগীর ওপর একটি পরীক্ষা করা হয়, যাদের প্রত্যেকের মুখে প্রিম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন) ক্ষত আছে। এদেরকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে ভিন্ন ঘনত্বের গ্রিন টির নির্যাস খেতে দেয়া হয় দিনে তিনবার ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত। 


পরীক্ষা শেষে দেখা যায়, যাদের বেশি ঘনত্বের গ্রিন টির নির্যাস দেয়া হয়েছিল তাদের মুখের ক্ষত ৫৮.৮% ভালো হয়েছে এবং পুরনো ক্ষত আর বৃদ্ধি পায়নি। যারা কম ঘনত্বের নির্যাস গ্রহণ করেছে তাদের ৩৬.৪% ক্ষত প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে এবং পাসিবো বা কিছুই দেয়া হয়নি যাদের তাদের ১৮.২% উন্নতি হয়েছে।

মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে গ্রিন টির এটিই প্রথম পরীক্ষা, যা থেকে মুখের ক্ষত প্রতিরোধ করার প্রমাণ পাওয়া যায়। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে গ্রিন টির ক্যান্সার রোধ করার ক্ষমতা আরো গবেষণার মাধ্যমে উন্মোচিত হবে।


ইতি কথা

ক্যান্সার প্রতিরোধ আশা করি উপরের খাদ্যগুলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। ক্যান্সার প্রতিরোধে জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনা ও ক্ষতিকারক অভ্যাসগুলি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার যোগ করা উচিত যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। 

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post