তারাবি নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

 তারাবি নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন 

তারাবি নামাজের নিয়ম হচ্ছে আরামের সহিত বিশ্রাম করে ধীরে ধীরে তারাবিহ নামাজ পড়া। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল, দিনের কর্মব্যস্ততা ও ক্লান্তির জন্য এক নাগাড়ে তারাবিহ নামাজ পড়ে থাকে।

তারাবির নামাজ কত রাকাত, তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, সুবহানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি বাংলা অর্থ, তারাবির নামাজের সুরা, তারাবির নামাজের দোয়া .jpg

তারাবি কি? 

তারাবিহ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’। প্রতি চার রাকাআত নামাজ শেষ করে যাতে একটু বিশ্রাম গ্রহণ করা যায় তাই একে তারাবিহ বলা হয়।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তারাবিহ নামাজ ছিল অনেক দীর্ঘ। এমনকি কিয়াম, রুকু, সিজদা সবাই ছিল খুব লম্বা ও ধীরস্থির। 


তারাবিহ নামাজের নিয়ত :

উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসালি­য়া লিল্লাহি তাআ’লা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা * মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। * (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।


অর্থ: আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।


তারাবিহ নামাজ পড়ার নিয়ম

তারাবিহ নামাজ ২ রাকাআত করে প্রতি ৪ রাকাআত পর খানিক বিশ্রাম গ্রহণ করা। এ সময় দোয়া করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। পরবর্তী ৪ রাকাআত সুন্দরভাবে আদায়ের শক্তি গ্রহণ করা।


অনেকে প্রতি ৪ রাকাআত পর পর মুনাজাত দেয়। আবার অনেকে একেবারে নামাজ শেষ করে মুনাজাত দেয়। উভয়টিই করা যেতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই।


তারাবিহ নামাজে ইমাম হোক আর মুসল্লি হোক প্রতিযোগিতা করে তারাবিহ পড়ার প্রবনতা পরিহার করা উচিত। কারণ যত তাড়াতাড়িই নামাজ পড়ার চেষ্টাই করা হোক না কেন, তাতে সময়ের ব্যবধানে বেশি হেরফের হয় না।


সুতরাং সামান্য সময়ের জন্য তারাবিহ নামাজের সৌন্দর্য বিনষ্ট করতে তাড়াতাড়ি তারাবিহ পড়ার প্রবনতা থেকে বেরিয়ে এসে অধিক ছওয়াব অর্জনের প্রত্যাশায় ধীর ও স্থিরভাবে তারাবিহ পড়াই উত্তম।


তারাবিহ নামাজের দোয়া

৪ রাকাআত তারাবিহ আদায় করার পর ব্যাপক প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে। যা দেশের প্রায় মসজিদে পড়া হয়। আর তাহলো-


سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ


উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’


উল্লেখ্য তারাবিহ নামাজের ৪ রাকাআত পর পর পড়ার এ দোয়াটি ব্যাপক প্রচলিত। তবে এ দোয়ার সঙ্গে তারাবিহ নামাজ হওয়া কিংবা না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে, এ দোয়া না জানলে তারাবিহ নামাজ আদায় হবে না। বরং যে কোনো দোয়াই পড়া যাবে। তবে এ সময়টিতে কুরআন-সুন্নাহর দোয়াগুলো পড়াই উত্তম।


তারাবি নামাজের মুনাজাত 

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নারী, ইয়া খালিকাল জান্নাতা ওয়ান্নারী, বিরহতিকা ইয়া আজিজু, ইয়া গাফফারু, ইয়া কারীমু, ইয়া সাত্তারু, ইয়া রাহীমু, ইয়া জাব্বারু, ইয়া খালিকু, ইয়া বার্র। আল্লাহুম্মা আযিরনা মিনান্নার; ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযিরু, ইয়া মুযির। বিরহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমিন।


তারাবির নামায নারী-পুরুষ সকলের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আমাদের দেশে তারাবীহর নামাজের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি খতম তারাবীহ আর অন্যটি সূরা তারাবীহ। 


খতম তারাবীহর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ করা হয়। খতম তারাবীহর জন্য কুরআনের হাফিযগণ ইমামতি করেন। সূরা তারাবীহর জন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠের মাধ্যমে সূরা তারাবীহ আদায় করা হয়।


ইতি কথা

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খতম তারাবিহ হোক আর সুরা তারাবিহ হোক; সব তারাবিহ নামাজ ধীরস্থিরভাবে পড়ার তাওফিক দান করুন। তারাবিহর ফজিলত লাভে নিয়মিত রাত জাগরণ করে তারাবিহ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post