রমজানের আমল সমূহ জেনে নিন

 রমজানের আমল সমূহ

রমজানের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার প্রথম পর্বে রমজান মাসে কোন কোন দোয়া বেশি বেশি করা উচিত, সে সম্পর্কে  চলুন নেওয়া যাক। 


রমজানের ক্যালেন্ডার ২০২২ সালের রমজানের রোজা রমজানের নতুন গজল 2020 ডাউনলোড ২০১৪ সালের রমজানের ক্যালেন্ডার রমজানের গান রমজানের সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২১ রমজানের তারিখ রমজানের গজল.jpg

কোরআনুল কারিম কেন্দ্রিক রমজানে বিশেষ পরিকল্পনা করুন। খতম উঠানোর জন্য ওঠেপড়ে না লেগে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত নিশ্চিত করুন এবং তাদাব্বুর তথা বুঝে বুঝে এবং অনুধাবন করে কোরআনিক মেসেজগুলো হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়ো করে অনেক খতমের চেয়ে বুঝে পড়া ও তিলাওয়াতের গুণগত মান নিশ্চিত করা বেশি জরুরি। 


রমজান আসার আগেই কোরআনের বিশেষ কিছু অংশ বা কয়েকটি সুরা মুখস্ত করার পরিকল্পনা করুন। পরিবারের সবাই মিলে মুখস্তকৃত অংশগুলো একে অপরকে শোনাতে পারেন। কোয়ারেন্টিনকে কোরআন টাইম বানান। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করছেন- ‘এর পরও কি ওরা কোরআন নিয়ে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে তা অন্তরে ধারণ করবে না? নাকি ওদের মনের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে? (মুহাম্মাদ: ২৪)।


রমজান মাস পুরোটাই মূলত রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আল্লাহর বান্দারা দোয়া করবে। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা রমজান মাসটাকে রহমতের জন্য ভরপুর করে দিয়েছেন। তাই আমরা আল্লাহতায়ালার কাছে রহমত চাইতে পারি এবং মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে পারি।


‘আল্লাহুম মাগফিরলি ওয়াতুব আলাইয়া’ ধরনের দোয়া করতে পারেন,যেগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা হয়েছে, অথবা আসতাগফিরুল্লাহা… ওয়াতুব ইলাইহে, অথবা যেগুলোতে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা রয়েছে, যেমন— লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদিরের মতো দোয়া করতে পারেন।


আর রাসুলুল্লাহ (সা.) শবে কদরের জন্য হজরত আয়েশাকে (রা.) যে দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছেন, সেটি হচ্ছে— আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু'উন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।


তারাবি নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন


এই সব দোয়ার মধ্যে মূলত ক্ষমার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এই ধরনের রেওয়ায়েতগুলো সামনে রেখে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এই সময়টা মূলত ক্ষমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এই সময়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে পারেন। তবে দোয়ার জন্য শর্ত নয় যে দোয়া আরবিতে হতে হবে। 


আপনি দোয়া বাংলায় করতে পারেন, আরবিতেও করতে পারেন। যদি আরবি দোয়া আপনার জানা না থাকে, আপনি নিজের ভাষায় দোয়া করতে পারেন। সেটাও করা জায়েজ আছে। সে ক্ষেত্রে মাতৃভাষায় বুঝে দোয়া করা, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।


এ বছর রমজানের শুরুতেই আপনার জাকাত আদায়ের পরিকল্পনা করে ফেলুন। আপনার জাকাতবর্ষ পূর্ণ হতে কয়েক মাস বাকি থাকলেও সম্ভব হলে এ রমজানেই জাকাত আদায় করে দিন। জাকাত অগ্রিম আদায় করা যায়। তাই করোনা পরিস্থিতিতে অভুক্ত ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে, আপনার জাকাতের অর্থ পৌঁছে দিন তাদের হাতে। 


কাজকর্ম সব বন্ধ থাকায় খাদ্যাভাবে কঠিন সময় পার করছে শ্রমজীবী স্বল্পআয়ের এ মানুষগুলো। এমন সংকটাপন্ন মুহূর্তে এর চেয়ে ভালো কোনো সৎকর্ম আর হতে পারে না। 


পাশাপাশি বিগত বছরের অপরিশোধিত জাকাত থাকলে সেটিও এই রমজানে আদায়ের পরিকল্পনা করুন। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করছেন- 

‘এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যে জাকাত তোমরা দিয়ে থাক, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়’। (আল-রুম: ৩৯)


ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবারের ব্যবস্থা করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি প্রিয় ইবাদত।প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন


ان في الجنه غرفه يرى ظاهرها من باطنها و باطنها منظاهرها أعدها الله تعالى من اطعمة الطعام و الان الكلام


নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন একটি আবাসস্থল রয়েছে (তাই এতই স্বচ্ছ যে) বাহির থেকে ভিতরে এবং ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যাবে ।আল্লাহ তায়ালা উত্তর জান্নাত তৈরি করেছেন এমন মানুষের জন্য যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায় এবং নরম ভাষায় কথা বলে। 

(মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৬৬১৫,২২৯০৫)


যদি তা হয় কোন রোজাদারের ইফতারি করানো তাহলে তার সাওয়াব ও ফযিলত আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ


من فطر صائما كتب له مثل أجرة لا ينقض من أجرة شيئ


যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারী করবে সে ঐ রোজাদারের সমপ্রতিদান প্রাপ্ত হবে।তবে একারনে রোজাদারের প্রতিদান কমোনো হবে না।

(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৩৪২৯,সহিহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ৪৬৩২,সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ৩৩১৭,৩৩১৮, সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ৮০৭,মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৭০৪৪,মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদিস নং ১৯৫৫৫,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস নং ৭৯০৫-৭৯০৬)


অন্য একটি হাদিসে এসেছে


من فطر صائما كان مغفرة لذنوبه و عتق رقبته من النار وكان له مثل أجره من غير أن ينقض من أجره شيئ قالوا ليس كلنا نجد ما يفطر الصائم فقال يعطي الله هذا الثواب من فطر صائما على تمرة او شربة ماء او مذقة لبن


যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারী করাবে তা তার জন্য গোনাহ আমাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম হবে। এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব হবে। তবে এ কারণে রোজাদারের প্রতিদান সামান্য পরিমাণ কমানো হবে না । 


সাহাবায়ে কেরাম বললেন হে নবী আমাদের অনেকেই তো রোজাদারকে পেট ভরে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (এ প্রতিদান পাওয়ার জন্য রোজাদারকে পেট ভরে ইফতার করানো জরুরি নয়)। বরং যে ব্যক্তি একটু খেজুর বা একটু পানি বা সামান্য দুধ পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এই বিরাট প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।


ইতি কথা

আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদতের নিয়তে সুবহে সাদিক (সেহরীর শেষ সময় ও ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সময়) থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সহবাস ও রোজা ভঙ্গকারী যাবতীয় কাজ হতে বিরত থাকা। আল্লাহ তাআলা রমজানজুড়ে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী উল্লেখিত তাসবিহ, ইসতেগফার ও দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করে রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post