স্বাধীনতা দিবস আর বিজয় দিবসের পার্থক্য কি?

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক দুটি জাতীয় দিবস পালন করা হয়। এ দুটি দিবসের একটি হচ্ছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, অপরটি হচ্ছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। প্রত্যেক স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি জাতীয় দিবস থাকে। 

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা, স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ, ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস.jpg

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশি উপনিবেশবাদী শক্তির শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার দিবসটিকেই জাতীয় দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে জাতীয় দিবস মূলত কোনটি তা স্পষ্ট নয়। দেখা গেছে, সরকার পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় দিবসের ধারণাও পরিবর্তিত হয়েছে। 


আবার বাংলাপিডিয়ায় শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ এবং বিজয় দিবস জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং দেশে জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে।


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপর্যুক্ত দুটি দিবসের মর্যাদা একই সমান। ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে কেন ঘোষণা করা হল, তার একটি ব্যাখ্যা প্রয়োজন। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান Defacto ও Dejure উভয় অর্থেই পাকিস্তানের কর্তৃত্বাধীন ছিল। এ কর্তৃত্ব অব্যাহত থাকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনা কর্তৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং পরাজয় মেনে নেয়। এ মধ্যবর্তী সময়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য সীমাহীন অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়ে গেছে। 


যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ বলতে পারেন, যখন বাংলাদেশ ভূখণ্ডটি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বাধীন ছিল তখন কী করে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস হল। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা অর্জন করেছে এ কারণে যে, ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি বাহিনী বিদ্রোহ দমনের নামে রাজধানী ঢাকায় অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা শুরু করে। একটি পদাতিক বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে যত রকম অস্ত্র ব্যবহার করে, সব রকম অস্ত্রই পাকিস্তানিরা ব্যবহার করেছিল গণহত্যার নেশায়। 


পাকিস্তান রাষ্ট্রের আদর্শগত ভিত্তি ছিল মুসলমানিত্বের। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীরা ভারতবর্ষ ছেড়ে যাওয়ার সময় ভারতবর্ষকে দুটি পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ভাগ করে রেখে যায়। ব্রিটিশ শাসনামলেই দাবি উঠেছিল, মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য পৃথক আবাসভূমি চাই। সেই আবাসভূমির নাম ছিল পাকিস্তান। 


পাকিস্তান রাষ্ট্রটি এমনভাবে গঠন করা হল, যার একটি প্রদেশ ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলে এবং চারটি প্রদেশ পশ্চিমাঞ্চলে। এ দুটি অঞ্চলের মাঝখানে ছিল বিশাল ভারতবর্ষ। যেসব অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল, সেসব অঞ্চল ধর্মীয় দিক থেকে অখণ্ড ভারতের মুসলমানপ্রধান এলাকা।


১৯৪০ সালে লাহোরে মুসলিম লীগের অধিবেশনে ভারতবর্ষের মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। এ প্রস্তাবে একাধিক সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানানো হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের দিল্লি অধিবেশনে এ প্রস্তাবটি সংশোধন করা হয়। একটি শব্দের বহুবচন রূপ থেকে একবচনরূপে পরিবর্তিত করার ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে এককভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি গঠিত হয়। 


ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানের এ দুটি অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব ছিল ১২০০ মাইল। অনেকেই মনে করেন, এত বিশাল দূরত্বে বিভাজিত দুটি অঞ্চল নিয়ে একটি দেশ গঠিত হতে পারে না। পৃথিবীতে অনেক দূরবর্তী ভূখণ্ড নিয়ে একক রাষ্ট্রের অস্তিত্ব এখনও আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে বেশ দূরে অবস্থিত দুটি রাজ্য আলাস্কা ও হাওয়াই। কোনো রাজনৈতিক বিভেদ ছাড়াই এ দুটি রাজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে অ-আমেরিকাসুলভ কোনো প্রতিক্রিয়া কখনই ব্যক্ত করেনি। 


কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমেরিকার দৃষ্টান্ত প্রযোজ্য হতে পারেনি। এর মূলে ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য, শোষণ এবং সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য অস্বীকার করা। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয় তার পরিণামে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানে চারটি ভিন্ন ভাষাভাষী প্রদেশের মধ্যে পাঞ্জাবের প্রভাব ছিল আনুপাতিক সাম্যের তুলনায় অনেক বেশি। এর মূলে ছিল ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিশেষ অবস্থান। 


রাষ্ট্রতত্ত্ব অনুযায়ী সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অন্য ধরনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনে সহায়ক হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন থেকেই সামরিক বাহিনী ও আমলাতন্ত্রে পাঞ্জাবিদের প্রাধান্য সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বিস্তারে পাঞ্জাবের জন্য অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে। রাষ্ট্রক্ষমতার ব্যবহারে শেষ বিচারে সামরিক বাহিনীর ওপর যারা প্রাধান্য বিস্তার করে, তারাই রাষ্ট্রের মালিক-মোক্তারে পরিণত হয়। 


পাকিস্তানের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবিদেরই এ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ছিল। হামজা আলাভির মতে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ। আলাভির এ তত্ত্বটি অভিনব; কিন্তু উপনিবেশোত্তর সমাজের ক্ষেত্রে অনেক দেশেই এ রকম অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।


মুসলমানদের নিরাপদ প্রদেশ ভূমি হিসেবে পাকিস্তানের অভ্যুদয় হলেও কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণ ও বঞ্চনা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানিদের মনে ধীরে ধীরে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানে মুসলমানরাই মুসলমানের শত্রুতে পরিণত হল। 


পূর্ব পাকিস্তানিদের অধস্তন অবস্থা সময়ের প্রভাবে অকল্পনীয় রাজনৈতিক ঝড়-ঝঞ্ঝার সৃষ্টি করে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে পরিণত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা গণতন্ত্রে একটি শক্তিশালী নিয়ম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একে অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে দুটি আসন ব্যতিরেকে সবক’টি আসন লাভ করে। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর পিপলস পার্টি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।


তবে এ দলটির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ যে ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল তার তুলনায় বেশ দুর্বল ছিল। ১৯৭০-এর নির্বাচন পাকিস্তানকে খাড়াখাড়ি দু’ভাগে ভাগ করে ফেলে। দুটি ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দল পাকিস্তানের দুই অংশে নির্ধারণকারী ভূমিকা অর্জন করে। পাকিস্তানে তখন সামরিক শাসন চলছিল। 


সামরিক কর্তৃপক্ষ গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ওপর আস্থাশীল ছিল। গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ অনেক কম আসন লাভ করবে। ফলে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য যেসব দল সংসদীয় আসন লাভ করবে তার সাহায্যে সামরিক বাহিনীর পছন্দসই একটি সরকার ও সংবিধান রচনা করা সম্ভব হবে। গোয়েন্দা তথ্যকে ভুল প্রমাণ করে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ যতসংখ্যক আসন লাভ করেছে তা দিয়েই কেন্দ্রে সরকার গঠন সম্ভব ছিল। 


কিন্তু পাকিস্তানি ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে কোনোমতেই কেন্দ্রীয় সরকারে দেখতে রাজি ছিল না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদ অধিবেশন নির্ধারিত তারিখে বসতে দেয়ার প্রতিশ্রুতি পরিবর্তন করেন। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না যে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সামরিক কর্তৃপক্ষ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। 


সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহাত্মক অবস্থার সৃষ্টি হয়। তা দমনের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ আগস্ট ১৯৭১ ঢাকা থেকে অভিযানের সূচনা করা হয়। দেশে রক্তের বন্যা বয়ে গেল। সব অর্থেই অপারেশন সার্চলাইট ছিল এক ভয়াবহ গণহত্যা। 


বর্তমান বাংলাদেশে ১৯৭১-এর মার্চ থেকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে রকম নির্মমতায় গণহত্যা চালিয়েছিল, তার ফলে পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের কারও মনেই সন্দেহ ছিল না যে, পাকিস্তান অখণ্ড থাকবে না। যে কোনো রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি হল জনগণের ওই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে বাস করার সম্মতি। 


কিন্তু ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী যে রকম নির্দয়ভাবে গণহত্যা চালিয়েছে তার ফলে প্রায় প্রত্যেক পূর্ব পাকিস্তানি পাকিস্তানকে একটি মৃত রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করেছে। রাষ্ট্রের মূল কথা হল, এর চৌহদ্দির মধ্যে যারা বাস করে তারা রাষ্ট্রীয় ভূখণ্ডকে সর্বসম্মতভাবে আশ্রয় ও ভালোবাসার আবাসভূমি হিসেবে গ্রহণ করবে।


কিন্তু ২৫ মার্চ ১৯৭১-এর কালরাত্রিতে সূচিত গণহত্যার ফলে বর্তমান বাংলাদেশি এবং সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানিরা কোনোমতেই পাকিস্তানকে গ্রহণে রাজি ছিল না। যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানিদের মন ভেঙে গেছে তারপর আর এখানে পাকিস্তানি কর্তৃত্বের কোনো সুযোগ থাকল না। 


মনে রাখতে হবে, ভাঙা মন নিয়ে কোনো রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। এ যেন মওলানা ভাসানীর কথিত আসসালামু আলাইকুমের বাস্তবায়ন। কিন্তু তখন আসসালামু আলাইকুম জানানোরও অবস্থা ছিল না। আমাদের দেশবাসীর মানসিক অবস্থা এতটাই আহত হয়েছিল যে, পাকিস্তান তাদের কাছে নিছক একটি মৃত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল।


দেশকে মুক্ত করার জন্য শুরু হল মুক্তিযুদ্ধ। এ মুক্তিযুদ্ধে যারা আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের বেশিরভাগই ছিল কৃষকের সন্তান। মুক্তিযোদ্ধারা দেশবাসীর কাছে আশ্রয় ও খাদ্যসহ অন্য সব ধরনের সহায়তা লাভ করেছিল। অভিযোগ আছে, যেসব তরুণ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতে গিয়েছিল অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের প্রত্যাশায়, তাদের অনেকেই নিরাশ হয়েছিল। কারণ মামুলি সামান্য কিছু অস্ত্র ছাড়া ভালো ও উন্নতমানের অস্ত্র ভারতের কাছ থেকে পায়নি। 


যুদ্ধের প্রথমদিকে এসব অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের স্যাবোটাজ করার জন্য কাজে লাগানো হয়েছিল। আবার অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনভুক্ত ছিল না, তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়নি এবং অস্ত্রও দেয়া হয়নি। শোনা যায়, এদের কাউকে কাউকে হত্যাও করা হয়েছিল।


১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে এ উপমহাদেশেই তিন রকম বয়ান আছে। আমরা যারা বাংলাদেশের নাগরিক তাদের কাছে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধটি একটি জনযুদ্ধ। এ যুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ সুস্পষ্ট সাড়া না দিলে কোনোক্রমেই বিজয় অর্জন সম্ভব ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তানিদের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানিরা পাকিস্তান আন্দোলনে অনেক বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু ভালোবাসা যেখানে গভীর সেখানে যদি অবিশ্বাসের মনোভাব দানা বাঁধে তখন আর ভালোবাসা থাকতে পারে না। 


ভারতীয়রা এ মুক্তিযুদ্ধের ওপর যত বইপত্র লিখেছে তার মধ্যে প্রধান ভাবধারা হল, ভারতের সামরিক বাহিনী যুদ্ধ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় নিশ্চিত করেছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান হওয়ার পর নেহেরুসহ ভারতীয় নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, অচিরেই পাকিস্তানের মৃত্যু ঘটবে। ভারত ’৭১-এর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এর বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে। 


স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ভিন্ন ভিন্ন বয়ান তুলে ধরছে। এর মূল কারণ হল দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য ও দেশপ্রেমের প্রকারভেদ। এ কারণে ইতিহাসের বিশ্লেষণ ভিন্নমুখী রূপ ধারণ করে। আজ যারা ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উত্থাপন করে, তারা কতটুকু ইতিহাস রচনার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বরং প্রশ্ন না উত্থাপিত হলে প্রকৃত ইতিহাস রচিত হবে না।


ইতিহাস সম্পর্কে যেসব ভিন্নমত আমরা দেখতে পাই তার মধ্যে দুটো বড় ঘটনা- প্রথমত, অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহতা ও হিংস্রতা পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের পাকিস্তান সম্পর্কে সামান্যতম দুর্বলতাকেও পরিহার করতে প্রণোদিত করেছিল। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে জগজিৎ সিং অরোরার কাছে নিয়াজির আত্মসমর্পণ। 


পাকিস্তানের পাঞ্জাবি ক্লিক যেদিন পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছে সেদিন থেকেই অহমিকাবোধ তাড়িত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবিচার করেছে। শুধু তাই নয়, এদের মূঢ়তার ফলে মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ল। বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই তাৎপর্যময়। বহু জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে যে কোনো একটি এথনিক গোষ্ঠী বঞ্চিতবোধ করলে এবং এ বঞ্চনাবোধ নিরসনের জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে বিচ্ছিন্নতাবোধের শক্তি বিস্ফোরণে পরিণত হতে পারে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post