প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন

 প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি সাজেশন যারা এবারের প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষা দিবেন লেখাটা তাদের জন্য, সঠিক দিকনির্দেশনা, পরিশ্রম ও কিছু টেকনিক অবলম্বন করলে এমসিকিউতে ভালো করা সম্ভব। তার আগে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটা ভালো করে জানুন , তারপর ভালো করে শুরু করুন।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সিলেবাস ২০২১ প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ সিলেবাস ২০২২ প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রশ্ন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার পাস নম্বর প্রা.jpg

কি কি বিষয়ে পড়বেন?

আমি মনে করি, যেহেতু সময় কম; তাই সব না পড়ে কেবল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়ুন। মানে, যেখান থেকে বেশি বেশি কিংবা বারবার প্রশ্ন আসে; সেই টপিকগুলো বারবার যত্নসহকারে পড়ুন।


এখন প্রশ্ন হলো, আমি তা কীভাবে বোঝবো? উত্তর একদম সহজ—আপনি যদি প্রাইমারি সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলো ভালোভাবে খেয়াল করেন। তাহলে দেখতে পাবেন, কোন টপিক থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে। আপনার হাতে এত সময় না থাকলে শুধু ‘প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ অ্যানালাইসিস’ বইটির সাজেশন ফলো করতে পারেন। 


যেমন- বাংলা অংশে বাংলা ব্যাকরণ থেকে প্রশ্ন থাকে বেশি এবং সাহিত্য থেকে কম আসে। দেখা গেছে, বাংলা অংশে ২০টি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা ব্যাকরণ থেকে ১৮-১৯টির মতো প্রশ্ন থাকে এবং বাকি ২-১টি প্রশ্ন থাকে সাহিত্য থেকে। তাই আগে ব্যাকরণ অংশ ভালোভাবে জোর দিয়ে পড়ুন। 


একান্তভাবে পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্নের সাথে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, জহির রায়হান, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও জসীম উদদীন পড়ুন। ব্যাকরণে প্রথমে কারক-বিভক্তি ভালো করে পড়ুন। এখান থেকে ২-৪টি প্রশ্ন থাকে। তারপর এককথায় প্রকাশ, সমাস—টপিকগুলো ভালোভাবে পড়ুন। সাথে বাগধারা, সন্ধি, সমার্থক ও বিপরীত শব্দ।


ইংরেজি অংশে ইংলিশ গ্রামার থেকে প্রশ্ন থাকে ১৯-২০টি। মানে ইংলিশ লিটারেচার থেকে মাঝেমধ্যে একটি প্রশ্ন থাকে। ২০১৯ সালে ৪ ধাপে ৯ সেটে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল ইংলিশ লিটারেচার থেকে। আর সেটি ছিল দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায়। অর্থাৎ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৯ সেটে মোট ৭২০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মাঝে কেবল ১টি প্রশ্ন ছিল ইংলিশ লিটারেচার থেকে!


তাই বলব, শর্টকাটে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এ মুহূর্তে ইংলিশ লিটারেচার পড়া বাদ দিন। একান্তই পড়তে চাইলে শুধু প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার বিগত সালের প্রশ্ন, উইলিয়াম শেক্সপিয়র, জন মিল্টন, জর্জ বার্নার্ড শ’র বইগুলোর নাম পড়তে পারেন। না পড়লেও বিশেষ সমস্যা নেই।


তাহলে এখন ইংলিশ গ্রামারে আগে ভোকাব্যুলারি না পড়ে থাকেন, তাহলে নতুন করে না পড়াই উচিত। বেশি জোর দিন পার্টস অব স্পিস ও টেন্সে। এ টপিক থেকে ৪-৫টি প্রশ্ন থাকতে পারে। তারপর প্রিপারেশন, কারেক্ট স্পেলিং, রাইট ফর্ম অব ভার্বস, সাবজেক্ট ভার্ব অ্যাগ্রিমেন্ট, ভয়েস চেঞ্জ, ন্যারেশন, সেনটেন্স কারেকশন পড়তে পারেন। আর সাথে পড়ে ফেলুন কন্ডিশনাল সেনটেন্স।


এবার আসা যাক গণিতের অংশে। গণিতের জন্য বীজগণিতের মান নির্ণয়, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, সুদ-আসল, গড়, সংখ্যা, উৎপাদক, অনুপাত ও ভগ্নাংশ পড়ুন। সাথে লসাগু, গসাগু, ঐকিক নিয়ম। বাকি সব বাদ দিন এখন। এখানে বলে রাখি, শতকরা, গড় ও বীজগণিতের মান নির্ণয় থেকে প্রশ্ন বেশি থাকে। জ্যামিতির অংশ থেকে কেবল বিভিন্ন প্রকার কোণ, সমকোণী ত্রিভুজ, বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্র পড়ুন।


সব শেষে আসি সাধারণ জ্ঞান অংশে। এ অংশে বাংলাদেশ বিষয়াবলী, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি—এ চার বিষয়ের ওপর ২০ নম্বর থাকে সাধারণত। তবে মাঝেমধ্যে ভূগোল ও পরিবেশ থেকে ২-১টা প্রশ্ন এসে থাকে। তবে মজার বিষয় হলো, বিগত সালের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে দেখা গেছে—সাধারণ জ্ঞানের ২০ নম্বরের মাঝে ১২-১৪টি প্রশ্ন এসে থাকে বাংলাদেশে বিষয়াবলী থেকে। 


বাকি ৬-৮টি প্রশ্ন এসে থাকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, সাধারণ বিজ্ঞান, কম্পিউটার, তথ্যপ্রযুক্তি, ভূগোল ও পরিবেশ থেকে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বাংলার প্রাচীনযুগ ও মধ্যযুগ পড়ুন। এরপর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ৬ দফা, মুজিবনগর সরকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মোঘল আমল, ইংরেজ আমল ভালো করে পড়ুন। সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পড়ুন।


সাধারণ জ্ঞানের অংশে বীরশ্রেষ্ঠগুলো ভালোকরে পড়ুন। এ মুহূর্তে বিজ্ঞান, আইসিটি নতুন করে কিছু পড়বেন না। আন্তর্জাতিক থেকে তেমন প্রশ্ন থাকে না। ২-১টি যা থাকে, কেবল জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার সদরদফতর কোথায়? এ জাতীয় প্রশ্ন থাকে। তাই বাকি সব বাদ দিন। সাম্প্রতিক থেকে ২-১টা প্রশ্ন থাকে। তাই সব না পড়ে আলোচিত ঘটনাগুলো পড়ুন। সময় না পেলে সাম্প্রতিক না পড়াই উচিত। পড়লেও কেবল পরীক্ষার ২-১ দিন আগে পড়বেন। এখন পড়লে ভুলে যেতে পারেন।


প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সামগ্রিক প্রস্তুতির জন্য উপর্যুক্ত টপিক ছাড়াও বিসিএস প্রিলির বিগত সালের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে পারেন। বিশেষ করে ৩৫তম-৪২তম। তবে বিসিএস প্রিলির সুশাসন, ভূগোল, ইংলিশ লিটারেচার, বাংলা লিটারেচার এসব চাইলে বাদ দিতে পারেন। তাহলে দ্রুত শেষ করতে পারবেন। হাতে সময় না থাকলে এসবের ব্যাখ্যা না পড়ে শুধু উত্তরগুলো পড়লেই হবে।


এরপর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার দেওয়ার আগে বাসায় ঘড়ির সময় ধরে মডেল টেস্ট দিন। মডেল টেস্ট বইটি বিষয়ভিত্তিক হলে ভালো। মানে–বাংলা-২০, ইংরেজি-২০, সাধারণ-২০, গণিত-২০ এভাবে আলাদা করে দেওয়া থাকলে। অনেক বইতে এমন বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে করে দেওয়া মডেল টেস্ট আছে। এতে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন, কোন বিষয়ে বেশি আর কোন বিষয়ে কম নম্বর পাচ্ছেন। 


যে বিষয়ে কম নাম্বার পাবেন, পরীক্ষার আগে বিষয়টি ভালোভাবে ঝালিয়ে নিয়ে পারলে আশা করি ভালো করতে পারবেন। যদি মডেল টেস্টে ৫০-৬০ নাম্বার পান, তাহলে আপনার প্রস্তুতি ধরে নেবেন মোটামুটি ভালো। আর যদি ৬০-৭০ বা তারও বেশি পান, তাহলে ধরে নেবেন প্রস্তুতি অনেক ভালো।


পরীক্ষার্থী যেহেতু ১৩ লাখ। তাই একসাথে সব জেলায় পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা কম। পরীক্ষা হবে শুধু এমসিকিউ এবং ভাইভা। রিটেন হবে না। মনে রাখবেন, এ কয়দিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনার ও আপনার পরিবারের ভাগ্যে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে বেশি বেশি পড়ুন। শুধু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বারবার। যেন পরীক্ষার হলে গেলে কনফিউজ না হন। মনে রাখবেন, আপনি ১ ঘণ্টা বেশি পড়া মানে ১ ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে।


ভুলে গেলে চলবে না- এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে সুযোগ করে দেয় না, নিজের সুযোগ নিজেকে তৈরি করে নিতে হয় যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়ে। আপনি এক ঘণ্টা বেশি পড়া মানে এক ঘণ্টার পথ এগিয়ে গেলেন সাফল্যের পথে। সকল সৎ ও পরিশ্রমীর জন্য শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ সবাইকে সাথে থাকার জন্য।


প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০২২

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ভর্তি যোগ্যতা

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ সিলেবাস ২০২২

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post